প্রকাশিত: ৩০/১১/২০১৭ ৭:৪৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:১৯ এএম

নিউজ ডেস্ক::
বাংলাদেশ জলসীমায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ায় বড় ধরনের নৌ-কূটনৈতিক সাফল্য দেখছে বাংলাদেশ। দুটি কারণে এ সফলতা বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত, বঙ্গোপসাগরের এ মহড়ায় প্রথমবারের মতো একসঙ্গে অংশ নিচ্ছে দুই ক্ষমতাধর দেশ ভারত ও চীন। মহড়ায় অংশ নেয়া ৪১টি যুদ্ধ জাহাজের মধ্যে ওই দুটি দেশের জাহাজের অবস্থান ছিলো পাশাপাশি। একযোগে তারা সমুদ্রে তিনটি পর্যায়ের মহড়ায় অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে সমুদ্র নিরাপত্তায় মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমারের একটি জাহাজ মহড়ায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আসতে পারেনি। তবে মিয়ানমার নৌবাহিনী প্রধান মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া। ইয়নস মাল্টিলেচারাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স-২০১৭) নামে এ মহড়া মঙ্গল ও বুধবার বঙ্গোপসাগরে সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩২টি দেশের মধ্যে ২৩টি সদস্য ও ৯টি পর্যবেক্ষক দেশসমূহের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌপ্রধান, ঊর্ধ্বতন নৌ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা অংশ নেয়। আন্তর্জাতিক এ সমুদ্র মহড়ায় ভারতের ৪টি যুদ্ধজাহাজ ও ১টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও ২টি হেলিকপ্টার এবং চীনের অত্যাধুনিক একটি যুদ্ধজাহাজ অংশ নেয়। এ প্রসঙ্গে নৌ গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক কমোডর এম সোহায়েল মানবজমিনকে বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের আসলে একযোগে কাজ করতে হবে। বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল জলসীমায় যদি হঠাৎ কোনো সমস্যা দেখা দেয় যেমন কোনো দেশের জাহাজে আগুন লাগলো বা শত্রুর মুখোমুখি হলো অথবা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো তাহলে এর নিরাপত্তা দেবে কে? অনেক সময় নির্দিষ্ট দেশের পক্ষে তা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ কারণে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মূলত এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই এ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ভারত ও চীনকে আমরা একযোগে মহড়ায় অংশ নেয়াতে পেরেছি। বৃহত্তর স্বার্থে দুটি দেশ বাংলাদেশের এ উদ্যোগে অংশ নিয়েছে। এটা বড় ধরনের নৌ-কূটনৈতিক সফলতা বলে মনে করি। এদিকে মঙ্গলবার মহড়ায় সরজমিন বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ বিজয় থেকে দেখা যায়, ভারত ও চীনের দুটি যুদ্ধজাহাজ পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে মহড়া চালাতে। তাদের মাঝে দূরত্ব ছিলো মাত্র ৪৫০ মিটার। সমুদ্রে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজকে উদ্ধার করতে একযোগে ওই দুই দেশের জাহাজ এগিয়ে যায়। মহড়ার নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ ‘বঙ্গবন্ধু’। সরজমিন ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজকে উদ্ধার করতে তিনি দেশের জাহাজের ক্রুদের মধ্যে হাই ফ্রিকোয়েন্সি বা এইচএফ কমিউনিকেশন সেট-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে দেখা যায়। পরস্পর জাহাজ থেকে কে কতটা দূরত্বে আছে বা কোন্‌ জাহাজ কি ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিয়ে যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিটি যুদ্ধজাহাজে একটি করে কমিউনিকেটর বা যোগাযোগ ব্রাঞ্চ থাকে। তারা বিভিন্ন জাহাজের বার্তা গ্রহণ করে ও তা বিতরণ করে। আবার অন্য জাহাজের জন্য কোনো বার্তা থাকলে তাও তারা জানিয়ে দেন। এসব বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে জাহাজের নিয়ন্ত্রকরা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন। এভাবে মূলত সমুদ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। দুই দিনের মহড়ায় তিনটি ক্ষেত্রে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে চার দেশের যুদ্ধজাহাজ। অপর দেশগুলো হচ্ছে ইরান ও ইন্দোনেশিয়া। প্রথম পর্যায়ে আগুন লাগা জাহাজকে উদ্ধার করতে তৎপরতা চালায় তারা। এখানেও ভারত ও চীনের দুই যুদ্ধজাহাজ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ওই মহড়ায় নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ বিজয়। বিজয় থেকে ওয়াটার গান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের আগুন নেভানো হয়। অপর দুটি অপারেশন চালানো হয় ডুবন্ত জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের রক্ষা ও জাহাজকে উদ্ধার করা এবং সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করা। মহড়ায় অংশ নেয়া ভারতের চারটি যুদ্ধ জাহাজের মধ্যে ছিলো ১৯৮৬ সালের ২৮শে অক্টোবর কমিশন পাওয়া আইএনএস রণবীর, ২০১২ সালে কমিশন পাওয়া আইএনএস সাইয়াডরি, ১৯৯৭ সালে কমিশন পাওয়া যুদ্ধজাহাজ আইএনএস ঘড়িয়াল ও আইএনএস সুকন্যা। অন্যদিকে মহড়ায় অংশ নেয় চীনের যুদ্ধজাহাজ প্লানস ইয়ংচেন। ২০১০ সালের ২৯শে জানুয়ারি কমিশন পাওয়া জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৩৯৬৩ টন। মহড়ায় ভারতের ডেলিগেশনের নেতৃত্ব দেন ভারতীয় নৌ-বাহিনী প্রধান এডমিরাল সুনিল লানবা। অন্যদিকে চীনের ডেলিগেশনের নেতৃত্ব দেন রিয়ার এডমিরাল ওয়াং হওবিন। এদিকে মহড়ায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত ও চীন। আগুন লাগা জাহাজকে উদ্ধার করায় দারুণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে ওই দুটি দেশ। এ প্রসঙ্গে বিএনএস বিজয়-এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) কমান্ডার এম ফজলার রহমান মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ জাহাজের সক্ষমতার প্রশংসা করেছে তারা। অল্প সময়ের মধ্যে কোনো রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই একটি জাহাজের আগুন নেভানো সত্যিই দুরূহ বিষয়। আমরা মহড়ায় সেটা খুব ভালোভাবে করতে পেরেছি। তিনি জানান, ভারত ও চীনের জাহাজগুলো মহড়ায় অংশ নেয়ায় তারা আমাদের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এটা এক ধরনের সফলতা বলে আমরা মনে করি। আইওএনএস-এর ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ছিলো বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে ৯টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে অংশ নেয় চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে সংস্থাটির দায়িত্ব পালন করছেন।

পাঠকের মতামত

জামিন নামঞ্জুর,ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

চট্টগ্রামের একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ...

বিসিআরসি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড- ২০২৫ এ ভূষিত হলেন পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম

পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ নাইমুল হক পিপিএম ময়মনসিংহ ...

সাজেদা বেগমকে গর্জনিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পন

শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি:: গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ...